রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবসম্পৃক্ত (ডিএসসিসি) ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ ডেমরা থানা এলাকায় পড়েছে। একই থানাধীন ৬৬ থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডসহ ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মিশুক। এসব যানবাহন প্রায়ই ডেমরা-শিমরাইল ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে চলাচল করে। তবে ডেমরা-শিমরাইল সড়কের সারুলিয়া বাজার থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত ইজিবাইক ও অটোরিকশা প্রকাশ্যে চলাচল করে। বর্তমানে ডেমরা থানা এলাকায় অন্তত ৬ সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনকে কেন্দ্র করে ডেমরায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্যারেজ। যেখানে হরহামেশাই মালিক বিদ্যুৎ চুরি করে ওইসব যানবাহনের ব্যাটারির চার্জ দেয়।
জানা যায়, মিশুক, অটোরিকশা ও ইজিবাইকগুলো কোনো রেজিস্ট্রেশন ও নম্বরপ্লেট না নিয়ে টোকেনভিত্তিক রাস্তায় চলাচল করছে। এসব যানবাহন চলাচলে প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগ সহযোগিতা করে থাকে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গ্রুপ ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক মাসিক ও দৈনন্দিন চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে নিষিদ্ধ যানবাহনগুলো সড়কে নামিয়েছে। আর এসব যানবাহনের মালিকরাও গ্যারেজভিত্তিক টোকেন নিয়েই রাস্তায় রিকশা, ইজিবাইক ও মিশুক নামাতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে মাস ও বছরভিত্তিক টোকেন দেয়া হচ্ছে। আরও জানা যায়, ডেমরা থানা এলাকায় ৫ সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। ইজিবাইক রয়েছে অন্তত ৭শ’। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নতুন করে কয়েক শতাধিক মিশুক নামানো হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে ও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চলছে ব্যাটারিচালিত হাজারও ভ্যানগাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, নিষিদ্ধ যানবাহনগুলো এলাকাভেদে খণ্ড খণ্ডভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। টোকেনের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেট প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা মনোগ্রামের স্টিকার ব্যবহার করছেন। প্রতিটি নিষিদ্ধ যানবাহন রাস্তায় নামাতে প্রথমেই ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয় সিন্ডিকেট। তারপর মাসিক অন্তত ৫শ’ টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়। এছাড়া বাৎসরিক টোকেনেরও প্রচলন রয়েছে। পাশাপাশি দৈনন্দিন প্রতিটি পয়েন্টে প্রতিটি যানবাহন থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। দিনে ডেমরার প্রধান সড়কগুলো কিছুটা এড়িয়ে চললেও সন্ধ্যার পর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এসব অবৈধ যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজটও। বাড়ছে হতাহতের ঘটনাও। এখানকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে রাতভর এসব যানবাহনে চার্জ দেয়া হয়। এতে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে লোডশেডিংও। মাতুয়াইল পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুল্লাহ বলেন, কোনো গ্যারেজেই অবৈধ সংযোগ দেয়া হয় না। মিটারভিত্তিক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে প্রায় প্রতিটি গ্যারেজেই। তবে বিদ্যুৎ চুরি বা অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগের মনিটরিং রয়েছে। আর অবৈধ সংযোগের সন্ধান পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি। মামুন নামে সারুলিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আড়াই মাস আগে বড়ভাঙ্গা থেকে তিনজন মিলে অটোরিকশায় আসছিলাম। তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমি নিচে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই আমার হাত ভেঙে যায়। চিকিৎসা চললেও এখনও হাতের উন্নতি হচ্ছে না। তিন মাস আগে ফার্মের মোড় এলাকায় রিকশা থেকে পড়ে তন্ময় নামে একটি ছেলের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের ডেমরা থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, আমরা সাধারণত পায়েচালিত রিকশা-ভ্যান চালানোর বিষয় নিয়ন্ত্রণ করি। তবে ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ যানবাহনের বিষয়ে কোন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে আমরাও বিভ্রান্ত।
রামপুরা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত কোনো যানবাহন বা রিকশা কিছুতেই চলতে দেয়া হয় না। ট্রাফিক বিভাগ প্রায়ই এসব যানবাহন ডাম্পিংয়ে পাঠায়। তবে এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচল করলেও প্রায়ই আমরা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করি। ইতিমধ্যেই চাঁদা আদায় ও সংঘবদ্ধ হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ কয়েকটি মামলা করেছে।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চাঁদা দেয়া ও চাঁদা আদায় করা দুটোই সমান অপরাধ। যেসব মালিক চাঁদা দেয় তারা যদি ওইসব ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিষিদ্ধ যানবাহন থেকে পুলিশের টাকা আসার বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়।